দ্যা বাঁশের খুঁটির ব্যাংক ইজ হ্যাকড
ওয়ানস আপন এ টাইম ইন দ্যা ইয়ার অব ১৯৯৮। তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। রোজ রোজ ক্রিকেট ম্যাচের টাকা আর নতুন ব্যাট-বল কিনার টাকা আম্মার দেওয়ার টিফিনের টাকা থেকে বাঁচিয়ে ঠিক পুষিয়ে উঠতোনা।
অথচ অন্যদিকে আমার ছোট আপা দিব্যি টিফিনের টাকা জমিয়ে পরে আম্মাকেও দিতো ওনার হাতের টাকার টান পরলে। আম্মার বিশ্বাসভাজন কন্যা বা লক্ষ্মী মেয়ে সেজে আরো কিছু সুবিধে আধায় করা, ওবার অল আমাকে আম্মার কাছে ভিলেন সাজানোই ছিলো ওই টাকা জমানোর আরেকটা লক্ষ্য। ওর উদ্দেশ্য সফল হলো ও এখন আম্মার কাছে খুব ভালো এবং খুব লক্ষ্মী মেয়ে। আর আমার কাছে সে বিষণ বোকা। এমন বোকা মেয়ে-তো লক্ষ্মী হবেই যে কিনা আম্মার দেওয়া টাকা আবার আম্মাকে ফেরত দেয়! টাকা বাঁচিয়ে ওর-তো আর ক্রিকেট খেলা লাগেনা, শুক্রবারে বিটিভির সিনেমা আর রাতের আলিফ-লায়লা দেখা লাগেনা। দিনে দিনে আমার উপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়তে থাকলো। পরিবেশের চাপে পরে আমাকেও আসল ভিলেন সাজাতে হলো! তাকে বুদ্ধি দিলাম তুই টাকা জমিয়ে পরে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু-ই তো কিনতে পারছ, শুধু শুধু আম্মারে দেওয়ার দরকার কি? আম্মার কি টেকার অভাব পরছে?
বুদ্ধিতে কাজ হলো, এখন সে বাংলা বইয়ের দুই পাতার ভাঁজের মধ্যে আবার কখনো কখনো পুরাতন চালের ড্রামের চালের মধ্যে কচকচে নতুন টাকার নোট লুকিয়ে রাখত। কিন্তু যেখানে রাখুক-না কেন আমি ভিলেন ওখানে হাজির!
আবার তখন তারে বুদ্ধি দিলাম, কোনটিতেই যেহেতু তুমি নিরাপদ বোধ করিতেছোনা সেহেতু তুমি এখন থেকে রান্না ঘরের বাঁশের খুঁটিতে ছিদ্র করে তার মধ্যে দুই আর পাঁচ টাকার কয়েন জমাতে পারো। এই বুদ্ধিটাও কাজে লাগলো। বাঁশের খুঁটির উপড়ে ছিদ্র করে বাঁশের কঞ্চির মধ্যে টাকার রাখার এই বিশেষ স্থানকেই “বাঁশের খুঁটির ব্যাংক” হিসেবে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ধরা হয়। দৃশ্যমান এই টাকা জমানোর সিস্টেমটি অতি আধুনিক এবং অনেক সিকিউরড মনে করে সে টাকা জমাতে শুরু করলো।
কিন্তু এ হ্যাকার ইজ অলওয়েজ হ্যাকার। সে জানেনা, এ হ্যাকার ইজ কি জিনিস! বাঁশের খুঁটির ব্যাংক থেকে টাকা বের করার নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা আমার মাথায় কিলি-বিলি করতে লাগলো। হঠাৎ খুলে গেলো সে বুদ্ধির দ্বার। আমি পেয়ে গেলাম, “হাও টু হ্যাক দ্যাট বাঁশের খুঁটির ব্যাংক”?
নতুন পরিকল্পনা নিয়ে তখন আমার আস্তানা রান্না ঘরের পেছনে। ওই বাঁশের খুঁটিটি আইডেনটিফাই করে ওই খুঁটির ঠিক নিচ বরাবার ফুঁটা করে টাকা বের করার এক অভিনব কায়দা আবিষ্কার করে ফেললাম। এই ফন্দিটি খুব লাভ-জনক হয়ে দাঁড়ালো ক্রিকেট ম্যাচ এর টাকা আর ব্যাট বল কিনার ক্ষেত্রে। ছোট আপাও টাকা জমাতে আছে, আমিও বের করতে আছি। একদিন আপাকে বললাম আপা এই টাকা জমার পরে তুই কি কিনবি? সে হেসে বললো, “তুমি চান্দু! যতই ছল ছাতরই করোনা কেন, এই টাকার কোন আংশিক কানা কড়িও তুমি পাচ্ছোনা”। আমি ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে দুই টাকার তিনটা কয়েন আপাকে দিয়ে বললাম, “তোর থেকে গত মাসের প্রথম দিকে যে ৬ টাকার ধার নিয়েছিলাম, আর ওই টাকার জন্য দিনের চয় দুকুনে ১৩ বার যে খোঁটা দিতে, এই নাও তোমার সেই ৬ টাকা”।
একদিন মহাসমারোহে, আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আম্মা এবং দাদিকে সাক্ষী রেখে সে বাঁশের খুঁটির ব্যাংক ভাঙতে গেলো। ভেঙে সেখানে টাকার পরিবর্তে পেলো কিছু কাগজ, সে কাগজে লেখা ছিল, “ইউর বাঁশের খুঁটির ব্যাংক হ্যাজ বিন হ্যাকড, ধন্যবাদ সিকিউরড ব্যাংকিং এর সাথে থাকার জন্য”।
এই অভিনব কায়দায় হ্যাকিং-এ সেতো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আমি দুঃখ এবং মায়া জড়ানো কণ্ঠ দিয়ে বললাম, “ইট ইজ ভেরি ব্যাড, দ্যা হ্যাকার ইজ ভেরি ব্যাড”। সে আমার দিকে তাকিয়ে আম্মা…. . বলে চিৎকার করে বেরিয়ে গেলো। ছোট আপার প্রথম আর একমাত্র সন্দেহ আমার উপর। কারণ এই বৈজ্ঞানিক উপায়ে হ্যাক্ড একমাত্র আমার পক্ষেই সম্ভব।
আম্মার কাছে বিচার গেলো। বিচারের পর তদন্ত হবে। তদন্তের পর আমাকে শাস্তি দেওয়া হবে, টিফিনের টাকা দেওয়া হবেনা, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে, তিন বেলা খেতে দেওয়া হবেনা, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আম্মার দেওয়া এসব শান্তিতে আমার থেকে বরণ আমার দাদিই বেশি কষ্ট পাবে, দাদির নাতির জন্য হাও-মাও করে কান্নাই ছিলো ওই বারের মত শাস্তি থেকে মাপ পাওয়ার একমাত্র কারণ। আমিও বললাম “আমি হ্যাকড করছি প্রমাণ করতে পারেনাই, আবার আমাকে শাস্তি থেকে মাপ, বাপরে বাপ”।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত)
লেখাটি ০৯ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোর ছুটির দিনের ফিচার পাতায় প্রকাশিত
Leave a Reply